নিও রিয়ালিজম- বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র (Neorealism Film)- মোস্তফা মনন

  • Published at: May 31, 2018

নিও লিয়ালিজমবাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র

প্রাককথন :

গল্প বলা ও গল্প শোনার আগ্রহ মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। পৃথিবীর সভ্যতার আদিম পর্যায়, গুহাবাসী মানুষ, প্রাচীন উপজাতিগোষ্ঠী দিনান্তে, উন্মুক্ত প্রান্তরে, জ্বলন্ত আগুনের সামনে পরস্পরকে নিজেদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিত। তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় আধুনিক গল্পকথনের চারুত্ব না থাকলেও রোমাঞ্চ, শিহরণ, আশ্চর্যের অভাব ছিল না। মানুষের এই গল্প বলার ভঙ্গি যুগযুগান্তে নতুন ভাবে অঙ্গসজ্জা পেয়েছে, অভিনব আকারে মানুষের বোধের অভিজ্ঞতায় তার প্রাত্যহিক জীবনচর্যার টানাপোড়েনের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে একীভূত হয়ে গেছে।

গল্প কথনের এই অভিনবত্ব কেবলমাত্র সাহিত্য বা ভাস্কর্য, চিত্রকলাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। শিল্পের অন্যান্য শাখাতে এর ক্রমবির্বতন সুষ্ঠভাবে বিদ্যমান। এই শতাব্দির অন্যতম প্রাধান্য বিস্তারকারী শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রের মধ্যেও এই গল্প কথনের রূপটি ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে।

চলচ্চিত্র সৃষ্টির নেপথ্যে সকল বিজ্ঞানী টেকনিসিয়ান্স ও সংশ্লিষ্ট সকলের ঋণ স্বীকার করে নিয়ে বলছি, পৃথিবীর পট পরিবর্তনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারার প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের চলচ্চিত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। তার মধ্যে ফ্রান্স, রাশিয়া, ইটালি, আমেরিকা, লাটিন আমেরিকা, ইরান, জার্মান, পূর্ব ইউরোপ, ভারত জাপান উল্লেখযোগ্য।

এসব দেশে চলচ্চিত্র বিকাশের ক্রমধারায় যেসব আন্দোলন গড়ে ওঠে তার মধ্যে আঁভাগার্দ, সিনেমা ভেরিতে, রিয়েলিজম, নিও রিয়েলিজম, ডাডাইজম, ফ্রি সিনেমা, অথর থিওরি, নুভেল ভাগ, এক্সপ্রেশনিজম, ইম্প্রেশিনিজম, ইরানি নিউ ওয়েভ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এখন আমরা ইটালিয় নিও রিয়েলিজম নিয়ে আলোচনা করবো; এ ধারার চলচ্চিত্রের সময়কাল ধরা হয় ১৯৪৫-১৯৫১ সাল পর্যন্ত, এ সময়কালের ভিন্নমতও রয়েছে। কেউ মনে করেন-১৯৪২-১৯৫১ সাল পর্যন্ত। আমরা মোটামুটি সহজভাবে বলতে পারি যে, চল্লিশের দশকই ইটালিয় নিও রিয়ালিজম ফিল্ম মুভমেন্টের সময়কাল।

 

 

ইতালিয়ান নিও রিয়ালিজম: জন্ম কথার প্রেক্ষাপট

. রাজনৈতিক আলোকে:-

বিশ্ববাসী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেখলো, তারা নির্বাক, ভাবলেশহীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপের মাটিতে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন ও মানুষের মনন চিন্তনে যে নতুন চেতনার ইঙ্গিত দেখা দিয়েছিলো, তার মধ্যে ক্রান্তদর্শী কবি শিল্পীরা নবজীবনের উল্লাস লক্ষ করেছিলেন। চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে তার জন্মের প্রায় ৫০ বছরের মধ্যেই এই শিল্প চেতনায় এক দারুণ আঘাত এলো। ইতোমধ্যে ২য় বিশ্বযুদ্ধও হয়ে গেল। মানুষের মানবিকতা বিপর্যয়ের চরমকালে অবস্থান করছে বিশ্ববাসী।

সময়টা ১৯৪৪ সাল। নাৎসিবাহিনী ইতালির কিছুটা অংশ জুড়ে জার্মানদের তাণ্ডবলীলার এখনও ছেদ পড়েনি। একদিকে মিত্রবাহিনী তার আফ্রিকা জয়ের পর্ব প্রায় সমাপ্ত করে এনে ইতালিতে প্রবেশ করেছে। চারদিকে বিশৃংখলা, ফ্যাসিবাদী মুসোলিনি ফ্যাসিস্ট কাউন্সিলে সমর্থক হারিয়েছেন। জার্মানরা তাকে ইতালির পুতুল শাসকরূপে ব্যবহার করছেন, মুসোলিনির স্বক্ষেত্রেও চরম দাঙ্গা উপস্থিত। ইতালির স্বদেশী যোদ্ধাদের সঙ্গে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সমর্থকদের বিবাদ চরমে। এই অবস্থায় মুসোলিনী পরাজিত, গৃহযুদ্ধের তুমুলকান্ডে পর্যদস্ত অবস্থায় ইতালি পরিত্যাগ করলেন। আর এক দিকে ঠিক একই রকম রাজনৈতিক অবস্থার অন্তরালে জন্ম নিল চলচ্চিত্রের এক মহান শিল্পমন্ত্র “নিও রিয়ালিজম।” ইতালিও পরিচালক রোসেলিনি “রোম ওপেন সিটি” ছবিটি দিয়ে নিও রিয়ালিজম শিল্পধারার প্রচলন করলেন।

 

. সাহিত্যের আলোকে:-

ইতালিয় সাহিত্যের সেরা লেখক- গাব্রিয়েল দানুনজিয়ো এবং আন্তোনিও ফোগাজারো’র অতিনায়ক আর পরিশীলিত মধ্যবিত্ত, চরিত্র সরিয়ে দিয়ে ত্রিশের নয়া সাহিত্যের ধারায় নায়ক হয়ে এলো গ্রামের মানুষজন- গেঁয়ো, আধাবুদ্ধি, ভবঘুরে….। এ সময়ের প্রথম সারির সাহিত্যিক এলিও ভিত্তোরিনির সেরা সাহিত্যকর্ম-“ইন সিসিলিও’তেও এ ধরনের চরিত্রের ছড়াছড়ি। আর এই বইটি ছিল নয়াবাস্তববাদী চলচ্চিত্রকারদের বাইবেল। এ ধারার ফিল্মেই এই ধরনের সমাজচ্যুত বা উপেক্ষিত সাদামাটা ভাঙাচোরা মানুষদের তাঁরা তুলে ধরেছেন।

 

. চিত্র কলায়:

সাহিত্যে এই ধারায় স্বার্থক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও চিত্রকলায় এই ধারা আগেই বিদ্যমান এবং বেশ প্রভাব বিস্তার করে আছে, যা পরবর্তী সময়ে এই নিও রিয়ালিজম ধারার চলচ্চিত্রকারদের বেশ অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।

 

একটি আগাম বার্তা:

বিস্ময়কর হলেও এ কথা সত্যি যে, ত্রিশের দশকে একদা ফ্যাসিতন্ত্র সমর্থক বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং লেখক লেও লোঙ্গানেসি যেন নয়া বাস্তববাদের যেন অগ্রিম আহ্বান করেছিলেন। ‘দ্যা গ্লাস আই’ শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি লেখেন,

“আমাদের এমন ফিল্ম বানানো উচিত নিতান্তই সরল এবং বাহুল্য বর্জিত, যাতে নেই কৃত্তিম সেটের ব্যবহার; এমন ফিল্ম যা যথাসম্ভব বাস্তব পরিমণ্ডল থেকেই শ্যুট করা। বস্তুত আমাদের ফিল্মে যা নেই- তা হলো বাস্তবতা। এখন প্রয়োজন সরাসরি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানো: মুভি ক্যামেরাটা নিয়ে যাওয়া রাস্তায়, প্রাঙ্গণে, ব্যারাকে, রেলস্টেশনে। একটা স্বাভাবিক, যুক্তিগ্রাহ্য ইতালিয় ফিল্ম তৈরি করার জন্য যথেষ্ট হলো রাস্তায় নেমে পড়া, যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়া, এবং শৈলি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মনোযোগ দিয়ে আধঘন্টা ধরে দেখা, কী সব ঘটছে।”

 

এবং একটি গোপন বৈঠক…..

১৯৪০-র দশকের মাঝামাঝি। জার্মান সৈন্যরা তখনও রোম থেকে বিদায় নেয়নি। মনোরম রোমের কাছাকাছি ভিয় দেল ত্রাফোরো-তে ১৩৩ নম্বর বাড়িতে বসেছে গোপন বৈঠক। আলোচনা হচ্ছে ইটালির সমসাময়িক চলচ্চিত্রের হাল হকিকত নিয়ে; কীভাবে তাকে তৃতীয় শ্রেণির মার্কিন চলচ্চিত্রের প্রকোপ থেকে বাঁচানো যায়, কী তার ভবিষ্যৎ.. ইত্যাদি।

আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন রোর্বের্ত রোসোলিনি , আলদো ভেরগানো, আলফ্রেদো গুসারিনি প্রমুখ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং চারটি গোপন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি) সোসালিস্ট পার্টি, কম্যুনিস্ট পার্টি, পার্টি অব অ্যাকশন, মুভমেন্ট অব কম্যুনিস্ট ক্যাথলিকস)। এরাই হয়ে উঠলেন আসন্ন নয়া- বাস্তববাদের সারথি। ১৯৪৪ সালে এ যখন জার্মানরা হটে গেল এবং সম্মিলিত শক্তির সামরিক বাহিনী প্রবেশ করলে, তখন এই চলচ্চিত্রকাররাই সদ্য প্রতিষ্ঠিত “ইউনিয়ন অব ফিল্ম টেশনিশিয়ানস্” এর অধীনে ইটালিও সিনেমা পুনরুজ্জীবিত করার শপথ নিলেন।

 

নিও রিয়ালিজম ধারার চলচ্চিত্র:

ইতালিয়ান নিও রিয়ালিজম মূলত একটি শিল্প দর্শন। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চল্লিশ দশকের শেষে উন্মেষিত এই শিল্প ধারার পরিচালকদের মূল স্লোগান ছিল Take the camera, Out into the streets জীবন যেমন, তাকে সেইভাবে যথাযথ ছবির পর্দায় তুলে ধরলেন পরিচালকরা। সেই সঙ্গে যুক্ত হলো শিল্পীর সহজাত মানবিকতা, ন্যায় ও সত্যের মূল্যবোধ, জীবন নিষিক্ত ভালোবাসার সহজ সরল গভীর প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন বিন্যাসে ব্যক্তি চেতনার জাগ্রত প্রকাশ, মানুষের প্রাত্যহিক উত্থান-পতন, বিচ্ছিন্নতাবোধ, উৎকেন্দ্রিকতা, মানবিক মূল্যবোধের নব মূল্যায়ন, এই সবই ইতালিয় সিনেমার নয়াবাস্তবতার অবদান। ইতালিয় নিও রিয়ালিস্ট চলচ্চিত্রকারদের শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে ছবিতে সমাজ সচেতনতার ছাপ পড়লো।

যুদ্ধের বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলায় ইতালির স্টুডিওগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিলো। অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরূপ শিল্পীরা স্টুডিও’র কৃত্তিম চত্বর ছেড়ে, সমস্ত রকম মেকি আধুনিকতার ফ্যাশন পরিত্যাগ করে যুদ্ধোত্তর ইতালির পথের ধুলোয় নেমে পড়লেন। উদ্দেশ্য একটাই দরিদ্র নিপীড়িত, লাঞ্চিত জনসাধারণের মুখের মিছিলে জীবনের বাস্তবরূপটি সন্ধান করা।

উনিশশতকী যুক্তিবাদী যে সব লেখকবৃন্দ, যেমন: গিত্তভান্নি ভারগা, লুইগি কাপুয়ানা, আন্তনিও ফোগাজ্জারো, এডমন্ডো ডি আমিকি প্রমুখেরা যে বাস্তব সম্মত শিল্পধারার প্রচেষ্টায় তাঁদের সাহিত্যের আন্দোলন অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন সিনেমার নিও রিয়ালিজম সেই ভাবধারারই এক ধরনের নব অভ্যূত্থান।

যদিও রোজোলিনির “রোম, ওপেন সিটি” ছবিকেই এই আন্দোলনের প্রথম অভিব্যক্তিরূপে চলচ্চিত্র সমালোচকেরা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু নিও রিয়ালিজম সংজ্ঞাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ইতালিয় ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক উমবার্তো বারবারারা ভিসকন্তি পরিচালক Osseessione ছবিটি প্রসঙ্গে। ১৯৪৩ সালের জুন মাসে ইল ফিল্ম পত্রিকায় একটি লেখায় তিনি বলেন If we in Italy wish to abandon once and for all our trashy histories, our rehashes of the 19th century and our trifling comedies, we muss try the cinema of realism.

এ ছবিতে সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মনস্তান্ত্বিক গভীরতা যা পরিচালকের ত্রিতল অভিজ্ঞতার দ্বারা বিধৃত।

ছবিটি ১৯৪২ সালে তৈরি হলেও সর্বসমক্ষে প্রদর্শিত হয় ১৯৪৬ সালে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৯৪৬ সালে রোজেলিনির “রোম, ওপেন সিটি”, ব্লাসেত্তির Ungiorno nella vita এবং লাতুয়াদারIl Bandito ছবিগুলির সঙ্গে এটি প্রদর্শিত হয়।

 

 

নিও রিয়ালিজম ধারার উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র পরিচালক🙁১৯৪২১৯৫১)

 

রোম, ওপেন সিটি (১৯৪৫) পরিচালনায়- রোর্বেত রোসোলিনি

ইয়োরোপা ফিফটি ওয়ান”

বাই সাইকেল থিভস্ (১৯৪৮) ভিক্তোরিও ডি সিকা

শু-সাইন (১৯৪৬) ”

মিরাকল ইন মিরান (১৯৫০)

উমবার্তো ডি”

ট্র্যাজিক হান্ট (১৯৪৭)ডি স্যান্টিস

বিটার রাইস (১৯৪৮) ”

টু লিভ ইন পিস (১৯৪৬) লুইজি জাম্পার

অ্যাঞ্জেলিনা (১৯৪৭)”

দ্যা আর্থ ট্রেম্বলেস (১৯৪৮) ভিসকন্তি

লা তেরে এমা (১৯৪৭) ”

দ্যা মিল অন দ্যা রিভার লাতুয়াদা

দ্যা বান্ডিট ”

সতো ইল সলো ডি রোমা রেনাটো কাস্টেলানি

স্প্রিং টাইম”

টু পেনি ওরথ্ অফ হোপ ”

 

উল্লেখিত সিনেমার সংক্ষিপ্ত গল্প ধারনা:

 

. রোম, ওপেন সিটি

রোম, ওপেন সিটি’র উপজীব্য মৃত্যু ও সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা। ১৯৪৩-১৯৪৪-এ জার্মানরা যখন রোম শহরকে “মুক্ত শহর বলে ঘোষণা করেছে তখন একদল শ্রমিকের ফ্যাসিবিরোধী ক্রিয়াকলাপের কাহিনী নিয়ে এই ফিল্ম। কয়েকটি উপাখ্যান জুড়ে তৈরি এই ফিল্মে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়েছে জাতীয়তাবাদ, খ্রিস্টধর্ম, নীতিবাদ, অস্তিত্ববাদ। অশুভের সাথে শুভ এর দ্বন্দ্ব। এখানে অশুভ পরাজিত। জাতীয়তাবাদের জয় হয়েছে। প্রামাণ্য লোকেশন আর শ্যুটিং এর বিশদ খুঁটিনাটি বিষয়কে রোসেলিনি প্রথম ব্যবহার কররেন চলচ্চিত্র বর্ণন এবং দৃশ্যগত বুনটের নাটকীয় অভিঘাতের প্রয়োজনে।

. পাইসা

রোসেলিনির পরবর্তী ছবি ‘পাইসা”-ও শিল্পকে প্রামাণ্য তথ্যের স্তরে উন্নীত করে। অনেক বেশি নিরজরিল ডকুমেন্টারি’ ঢঙে তৈরি এ ফিল্মকে অনেকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি বলে মনে করেন। ছয়টি বিভিন্ন উপ্যাখ্যানে বিন্যাস্ত ফিল্মটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো বদলে যেতে থাকে; কিন্তু পুরো ফিল্ম টানটান বাঁধা থাকে এক অন্তনির্হিত মানবতাবোধ এবং আত্মিকতাবোধের নির্যাসে, গড়গড় করে বলে চলা কোন একটি গল্পের ধারাবাহিকতা নয়। এভাবে প্রচলিত হলিউড ফিল্মের বর্ণনরীতি (ন্যারেটিভ) থেকে সরে আসেন রোসেলিনি।

 

. জার্মানি, ইয়ার জিরো

১৯৪৭ সালে রোসেলিনি তৈরি করেন, “জার্মানি, ইয়ার জিরো। ডকুমেন্টারি ঢঙে তিনি দেখালেন ধ্বংসীভূত বার্লিন শহর- তার উপচে পড়া গাড়ি-ঘোড়া, কালোবাজার ইত্যাদি। এই প্রামাণ্যতার পাশাপাশি রোসেলিনি রাখলেন নৈতিকতার প্রসঙ্গ। বস্তুত নয়া বাস্তববাদকে রোসেলিনি তাঁর খ্রিস্টান বিশ্বাসে জারিত নৈতিকদতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তুলে ধরেছিলেন।

রোসেলিনির হাতে যে নতুন চলচ্চিত্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয়ে গেল উপরোক্ত চলচ্চিত্রত্রয়ী দিয়ে, তাকে ইতোমধ্যেই  পূর্ণতর রূপ দিতে শুরু করেছেন দুই রূপকার ভিত্তোরিও ডি সিকা এবং সেজার জাভাতানি। সালতামামির হিসেবে রোসেলিনি পথিকৃৎ হলেও নয়া বাস্তববাদের প্রধান প্রবক্তা, দার্শনিক ও তাত্তি¡¡ক কিন্তু এই ডি সিকা-জাভাতানি জুটি। ডি সিকার প্রায় সমস্ত ফিল্মেও চিত্রনাট্যকার ছিলেন জাভাতানি।

১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে এই জুটির হাতেই তৈরি হয়েছিল ‘শু শাইন’ এবং ‘বাই সাইকেল থিভস’। সরাসরি যুদ্ধেও প্রসঙ্গ-পটভূমি থেকে সরে এসে এঁরা ধরলেন যুদ্ধোত্তর ইতালির মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দুর্ভোগ, যন্ত্রণা, অপমান। এর মধ্যেই এঁরা খুঁজে পেলেন মানুষের মুখ, মানবিক বৈশিষ্ট্য। ডি সিকা তার পরিচালনার গুণে এর সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন নৈতিকতা এবং কবিতা।

. শু শাইন

শু শাইন’-এর নায়ক রোমের রাস্তাঘাটের জুতো পালিশ করা ক্ষুদে ছেলেপুলেরা-রাস্তা থেকেই যাদেও আয়, রাস্তাতেই যাদের বসবাস। এই ফিল্মে কিশোরদের বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, হত্যা, অনুশোচনা সব মিলেমিশে এক সংবেদনশীলতার কাব্য তৈরি হয়।

 

বাই সাইকেল থিভস

. বাই সাইকেল থিভস্

নব্য-বাস্তববাদের সেরা নিদর্শন এবং প্রায় প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়েছে ‘বাই সাইকেল থিভস্’; অচিরেই গোটা পৃথিবী জুড়ে তা হয়ে দাঁড়ায় এক ‘কাল্ট ফিল্ম’।

লুইগো বাত্তলিনি’র মূল উপন্যাস ছিল নিতান্তই মামুলি। জনৈক দরিদ্র মানুষের নগণ্য কাজের জন্য অপরিহার্য বাইসাইকেলটি একদিন হঠাৎ খোয়া যায়। সে সারাদিন তার ছোট ছেলেকে নিয়ে চোরের সন্ধানে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেও সাইকেলটি না পেয়ে আরেক জনের সাইকেল চুরি করতে প্রবৃত্ত হয়, কিন্তু জনতার হাতে ধরা পরে হেনস্তা হয়। পাশে দাঁড়িয়ে ছোট ছেলেটি দেখে, ছুটে বাবার কাছে আসে। অপমান লাঞ্চনা সয়ে আবার ছেলের হাত ধরে রাস্তায় নামে। এ রকম একটা ছোট নগণ্য সংবাদকে এক গভীর সংবেদনশীল মনস্তাত্তি¡ক, মানবিক (এবং বস্তুত রাজনৈতিক) দলিল কাব্যে উত্তীর্ণ করেছেন ডি সিকা। অথচ ফিল্মে তিনি না এনেছেন নাটকিয়তা, না কোনও স্পেকট্যাকল।

বিখ্যাত ফরাসি নন্দনতাত্ত্বিক অঁদ্রে বাজাঁ বলেছেন ‘বাইসাইকেল থিভস্ হলো বিশুদ্ধ চলচ্চিত্রের অন্যতম পথনিদর্শন। (এতে) না আছে কোনও অভিনেতা না আছে কোনও কাহিনী, না কোন সেট; অর্থাৎ বাস্তবের নিখুঁত নান্দনিক ভ্রম সৃষ্টিতে (তথাকথিত) সিনেমা-ই আর নেই।’

স্বভাবত সে দিন এই ফিল্ম চলচ্চিত্র নির্মাণের, চলচ্চিত্রের নান্দনিকতার প্রচরিত সমস্ত ধ্যান ধারণার নস্যাৎ করে দিয়েছিল; বিশেষত হলিউডকে একেবারে চমকে দিয়েছিল।

 

. ‘লা তেরা ত্রেমা

প্রায় একই সময়ে ভিসকোন্তি তৈরি করলেন আর একটি উল্লেখযোগ্য ফিল্ম ‘লা তেরা ত্রেমা’। ১৯৪৭ এর আগস্ট মাসে সিসিলিতে কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের যে হিংসাতœক সংর্ঘষ হয়েছিল তাকে কেন্দ্র কওেই তৈরি হয়েছিল এই ফিল্ম; এর মূল বক্তব্য ছিল এক পরিবর্তনহীন বন্ধ্যা অবস্থা থেকে মানুষের বেরিয়ে আসার চেষ্টা এবং তার অন্তহীন প্রতীক্ষা। পরিচালক এই ফিল্মে ব্যবহার করেছিলেন সিসিল-ও স্থানীয় কথ্য ভাষা (ডায়ালেক্ট), আর গভীর মমত্ব দিয়ে তুলে ধরেছিলেন মানুষের মুখ এবং অভিব্যক্তি; এভাবে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন আবেগের অভিঘাত।

এছাড়া উল্লেখ করতে হয় ডি সান্তিসের দু’টি ফিল্ম: ‘ট্র্যাজিক হান্ট(১৯৪৭), এবং ‘বিটার রাইস’(১৯৪৮)। প্রথমটিতে প্রাধান্য পেয়েছে যুদ্ধোত্তর ইতালির কৃষক আন্দোলন, ধর্মঘট, জমিদখল, পুলিশী হামলা, ডাকাত তাড়ানোর প্রতিরোধ ইত্যাদি। আর দ্বিতীয়টিতে মৃত দেহের উপর তার সহকর্মীদের দ্বারা মুঠোভর্তি কওে চাল ছরিয়ে যাওয়া এবং সমসাময়িক ইতালির জনজীবনে আমেরিকার প্রভাব।

রোসেলিনি, জাভাতিনি, ডি সিকা, ভিসকন্তির পথ অনুসরণ করে ১৯৪০- এর দশকের শেষ দিকে প্রায় সমস্ত ইতালীয় পরিচালক নব্য বাস্তববাদী ব্যাকরণ-প্রকরণ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চা্লিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখ করতে হয় লুইগি জাম্পা, আলবের্তো লাতুয়াদা, পিয়েত্রো জের্মি প্রমুখের কথা।

নিও রিয়ালিজম সিনেমার স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য

বির্তক আছে নব্য বাস্তববাদী চলচ্চিত্রের স্বরূপ নিয়ে। চলচ্চিত্র সমালোচক এবং ঐতিহাসিক জর্জ সাদুল মনে করেন-

‘নয়া-বাস্তববাদ প্রকৃতই একটা ঘরানা; এর মূল বৈশিষ্ট হলো স্পষ্টত চিহ্নিত এক ভৌগলিক সীমানা (মূলত রোমকেন্দ্রিক), সময়কালের পরিসীমা (১৯৪৫ থেকে ১২৯৫২ পর্যন্ত), একদল গুরু (ডি সিকা, জাভাতিনি, ভিসকোন্তি,রোসেলিনি), এক ঝাঁক শিষ্য (ডি সান্তিস, জাম্পা, জের্মি, কাস্তেলানি, আলদ্ ভেরগানি) আর কিছু আঙ্গিকগত সাদৃশ্য (যেমন লোকেশন, শ্যুটিং, দীর্ঘায়িত(লং) শট, অবাধ সম্পাদনা, স্বাভাবিক আলো প্রয়োগ সমসাময়িক জীবনমুখী বিষয়বস্তু, শ্রমিকশ্রেনি থেকে নেওয়া কেন্দ্রীয় চরিত্র, অ-পেশাধারী অভিনেতাদল, কথ্য ভাষার সংলাপ, অন্তনির্হিত সমাজ-সমালোচনা, ইত্যাদি।’

কিন্তু এধরনের ফর্মুলা মাফিক সংজ্ঞায় আপত্তি করেছেন অনেকেই। কারণ একে তো ‘ফিউচারিস্টদের মতো নয়া বাস্তববাদী চলচিত্রকাররা তেমন কোনও বিধিবদ্ধ দলভূক্ত ছিলেন না। তা ছাড়া এ আন্দোলনের সূত্রপাতের আগেই একাধিক ইতালিয় চলচ্চিত্রে লোকেশন, শ্যুটিং অপেশাদারি অভিনেতা, কথ্য ভাষায় সংলাপ পুরো মাত্রায় ছিল।

পেতার বোন্দানেলা, লুইগি চিরিয়ানি, মিরা লিয়েম- এর মতো বিশিষ্ট ফিল্ম ঐতিহাসিকেদের মতে নয়া বাস্তববাত প্রথমত এবং প্রধানত এক নৈতিক অবস্থান, যার উদ্দেশ্য ‘নিতান্ত ব্যক্তিগত’ প্রেক্ষিতের বদলে ‘অন্যদের’ বাস্তবতা তুলে ধরা; সেখানেই নয়া বাস্তবাদদের প্রকৃত বস্তুনিষ্ঠা।

১৯৫২-তে ফরাসি পত্রিকা ‘ফিল্ম ইট ডকুমেন্টস’-এ নিও রিয়ালিজম এর মৌলিক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে দশটি সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছিল-

 

 

১. বক্তব্য

২. সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ,- কেন্দ্রিক সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন

৩. প্রামাণিকতা

৪. সূক্ষ-সংবেদনশীল রীতির আশ্রয়ে বাস্তবতার প্রকাশ

৫. স্বতঃস্ফুর্ত জনগণের কর্মকান্ড ক্যামেরায় বিধৃত করা

৬ অভিনেতা তথা চরিত্রের সত্যকে উপলব্ধি করা

৭. দৃশ্যগত প্রামাণিকতা ও স্টুডিও বর্জন

৮. কৃত্তিম আলোকসম্পাত ব্যতিরেকে ¯স্বাভাবিক আলোক উৎসের সত্যকে তুলে ধরা।

৯. ফটোগ্রাফির রিপোর্টধর্মী স্টাইল

১০. ক্যামেরার চূড়ান্ত স্বাভাবিক গতি ভঙ্গি অনুসরণ এবং দৃশ্যগ্রহণ পরবর্তী সিংক্রনিজম।

 

এবং আরোও কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যায়

 

সাদা কালোয় নির্মিত।

চরিত্র দিয়ে গল্প বলানো।

গল্পের বিষয়বস্তু সাদামাটা।

দারিদ্র শ্রেণির অংশগ্রহণ।

চরিত্রগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরিক সুসম্পর্ক।

সততা।

জীবন সংগ্রামী (স্ট্রাগল)।

এই শিল্প আন্দোলনের প্রায় দুই দশক পরে ১৯৭৪ সালে ইতালিয় চিত্র সমালোচক নিও রিয়ালিজম সম্পর্কে মূল্যবান ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন- নয়া বাস্তবতা আন্দোলনটি মূলতঃ an ethics of aesthetics.

 

নিও রিয়ালিজম ধারার ইটালিয় চলচ্চিত্রে পরবর্তী কালে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন

মাইকেলেঞ্জেলো আন্তনিওনি (জ.১৯১২) ছবির মধ্যে ওয়েছে- লাভস্টোরি (১৯৫০), দি গার্ল ফ্রেন্ড(১৯৫৫), ইল গ্রিডো (১৯৫৭), লা আভেস্তুরা (১৯৬০), দি রেড ডের্জার্ট (১৯৬৪),

দি ব্লো আপ (১৯৬৬) জা ব্রিস্কি পয়েন্ট (১৯৬৯), দি প্যাসেন্জার (১৯৭৫) প্রভৃতি।

ফেদরিকো ফেলেনি (১৯২০-১৯৯৩) এ ছবি- লা দলচে ভিভা (১৯৫৯), এইট এন্ড হাফ (১৯৬৩), জুলিয়েট অব দি স্পিরিটস (১৯৬৫), দি ক্লাউন্স (১৯৭০) রোমা (১৯৭২), মিস্ট্রি অব ওমেন (১৯৭৯)

 

বার্নাদো বার্তোলুচ্চি (জ.১৯৪০) রাজনৈতিক ও মনস্তাত্তিক ছবি নির্মাাণে দক্ষ। তার ছবির মধ্যে রয়েছে- দি লাস্ট এম্পেয়ার (১৯৮৭), লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস (১৯৭২), লিটল বুদ্ধ (১৯৯৩) স্টিলিং বিউটি (১৯৯৬), ইত্যাদি

ফ্রান্সিসকো রোসি ( জ. ১৯২২) এর ছবির মধ্যে রয়েছে- হ্যামলেট (১৯৬৩),, হ্যান্ড ওভার সিটি(১৯৬৪), লাকি লুচ্চিয়ানো(১৯৭৩),ব্রাদার্স (১৯৮১) ইত্যাদি।

পিয়ের পাওলো পাসোলিনি কবি এবং পরিচালক হিসেবে খ্যাত। তার উল্লেখ্যযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- অ্যাকটন (১৯৬১), মামা রোমা (১৯৬২), অডিপাস ওেস্ক ৯১৯৬৭), প্রোসাইল (১৯৬৯), পায়ূকামের ১২০ দিন প্রভৃতি।

তা ছাড়াও আর দুজন পরিচালকের নাম উল্লেখ্য করতে হয়, তারা হলেন- জেফিরোল্লি এবং পন্টিকর্ভো,

দেশে দেশে নিও রিয়ালিজম ফিল্মের প্রভাব

পূর্ব ইয়োরোপীয় চলচ্চিত্রের যুদ্ধোত্তর ও আধুনিক ক্রমবিকাশে এই আন্দোলনের বিশেষ ভূমিকা স্বীকৃত। হাঙ্গেরি, পোলান্ড, চেকোস্লাভাকিয়ার চলচ্চিত্রশ্রষ্টারা এর দ্বারা বিশেষ প্রভাবিত হয়েছিলেন। পেলিক্র মারিয়াতে, জোলতান ফেব্রি, এলমার ক্লজ, ইয়ান কাদার, আদ্র ওয়াজদা, আঁদ্রে মূন্ক, জেরী কাওয়ালেওেউইজ, প্রমূখ শ্রষ্টাদের শিল্পকর্মে এর স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়।

এ ছাড়াও রাশিয়ার মিখাইল রমও, ফ্রান্সের ক্লেমে, কায়েৎ, ক্লুজো, গোদার, এবং ক্রফো, জাপানের কিনোশিটা, ইচিকাওয়া, এবং ওশিমার শিল্পকর্মেও এই ধারা প্রতিফলিত। দেরিতে হলেও সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী এবং মার্কিন পরিচালক এলিয়া কাজানের বুমেরাং পেনিক ইন দি স্টিটস, ওন দ্যা ওয়াটার ফ্রন্ট প্রভৃত ছবি এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

১৯৫৬-১৯৫৯ এর ব্রিটিশ ফ্রি সিনেমা, ১৯৫৮-১৯৫৯ ফ্রান্সের নবতরঙ্গ আন্দোলন, ষাটের দশকের ডিরেক্ট সিনেমা, ইরানি নিউ ওয়েভ ইত্যাদি ‘নয়া বাস্তবতা’ শিল্পশৈলির প্রত্য¶ উত্তরসূরি হিসেবে বিচার্য।

 

অবশেষে বলা যায়

হিসেব করেই বলা যায় ইতালির নিও রিয়ালিজম বা নয়া বাস্তবতা’র আন্দোলনটি চলচ্চিত্র ইতিহাসে টিকে ছিল বছর ছয়-সাতেক। সমালোচকদের মতে-১৯৪৫এ রোজেলিনির রোম, ওপেন সিটি থেকে শুরু করে ১৯৫১ সালে তৈরি ডি সিকার ‘উমবার্তো ডি’ ছবি পর্যন্তবিস্তৃত এর সময়সীমা। এই সীমিত সময় পর্বে পরিচালকেরা যে কয়টি ছবি বিশ্ব দর্শকদের দান করেছেন, তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিল্প-প্রভাব অত্যন্তগভীরতা ও ব্যপক।

এ আন্দোলনের সবচেয়ে মহৎ অবদান-মানবিক দয়া, এর নিষ্ঠা ও স্টাইলের কঠোর শিল্প সংযম। অসংখ্য ছবির দৃশ্যকল্প যুদ্ধোত্তর মানুষকে সত্য ও ন্যায় মানুষের জীবন নিগুঢ় ভালোবাসার প্রতি এগিয়ে এসেছে। এই ইতিবাচক দিকটা সিনেমার ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদায় চিহ্নিত।

 

 

তথ্যসূত্র

শিল্পকলার ইতিহাস- কামাল আহমেদ

রূপোলিফিতে -আলী ইমাম

চলচ্চিত্র নির্মাণের নেপেথ্যে একথা- আবদুল্লাহ জেয়াদ

চলচ্চিত্র বিদ্যা -অনুপম হায়াত

চলচ্চিত্রের ঘর বাহির – সোমেন ঘোষ

প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধান – ড. আব্দুস সাত্তার

বিশ্ব শিল্পের ইতিহাস-

প্রসঙ্গ নাটক- কবীর চৌধুরী

সিনেমার শিল্পরূপ -তানভীর মোকাম্মেল

ব্রেসঁ ১০০ -সম্পাদনা- শেখরদাশ ও চন্ডিমুখোপাধ্যায়

চলচ্চিত্র অভিধান -ধীমান দাশগুপ্ত সম্পাদিত

শতবর্ষের চলচ্চিত্র – নির্মাল্য ও দিব্যেন্দুপালিত সম্পাদিত

চলচ্চিত্রের শব্দকথা – মনফকিরা চলচ্চিত্র কথা সংকলন ২

সিনেমার কথা- গাঁস্ত রোবের্জ ।

চলচ্চিত্র সমালোচনা -অজয় সরকার

শিল্পীর ট্রাজেডি- মোবাশ্বের আলী।

লিটল ম্যাগাজিন/পত্রিকা

থিয়েটার ওয়ালা, থিয়েটার ,

কালি ও কলম, নতুন দিগন্ত

এবং ইটালিয়ান নিও রিয়ালিজম ধারার চলচ্চিত্রগুলো

 

মোস্তফা মনন

লেখক, পরিচালক